ঢাকা, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আজ সোমবার বলেছেন, তার দল যদি জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় ফেরে, তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) বিলুপ্ত করবে।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত ‘অর্থনৈতিক সংস্কার সম্মেলন’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই অঙ্গীকার করেন। ‘লুটপাট’ বন্ধে এফআইডি বিলুপ্তির ঘোষণা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যেই এফআইডি তৈরি করা হয়েছিল। তাঁর অভিযোগ, এর উদ্দেশ্য ছিল এমডি নিয়োগ ও পর্ষদে পছন্দের লোক বসিয়ে ‘লুটপাট’ করা।
তিনি বলেন, “এই বিভাগটি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে তৈরি করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল এমডি ও পর্ষদে পছন্দের লোক বসিয়ে লুটপাট করা।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিএনপি এর আগে ক্ষমতায় এসে এই বিভাগটি তুলে দিয়েছিল, কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এটি আবার ফিরিয়ে আনে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এটিকে পুনরায় বিলুপ্ত করবে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ স্বাধীনতা ও বিনিয়োগ সংস্কার বিএনপি নেতা জোর দিয়ে বলেন, আর্থিক খাতে সংস্কার করে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বায়ত্তশাসন নয়, পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। এছাড়া বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সংস্কার করা হবে বলেও তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।
আমলাতন্ত্র ও এনবিআর নিয়ে ভিন্ন পরিকল্পনা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) -কে দুই ভাগ করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, এতে কোনো লাভ হবে না, কারণ উভয় ভাগেই আমলারা আছেন। এনবিআর নিয়ে বিএনপির ভিন্ন পরিকল্পনা আছে বলেও তিনি আভাস দেন।
আমলাতন্ত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে আমলাতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করবে না বা তাদের জবাবদিহিরও কিছু থাকবে না। বরং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে আমলাদের দায়িত্ব কমিয়ে আনা হবে। সরকারের সকল ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণের দায়িত্ব আমলাতন্ত্রের পরিবর্তে নীতিনির্ধারকদের হাতেই থাকবে।
বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে অর্থনৈতিক সংকট প্যানেল আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন: জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম তামিম বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে তীব্র জ্বালানিসংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত ১৫ বছরে নিজস্ব জ্বালানি উৎস কাজে লাগাতে কোনো বিনিয়োগ হয়নি। বরং বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপনে প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলার (৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ব্যয় হয়েছে, কারণ এখানেই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির সুযোগ ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর মন্তব্য করেন, অতীতের সরকারের প্রবৃদ্ধির মডেল দারিদ্র্য ও বেকারত্ব সৃষ্টি করেছিল। তাদের তথাকথিত অর্থনৈতিক অলৌকিকতার গল্পের আড়ালে লুকিয়ে ছিল কঠিন বাস্তবতা, যা এখন প্রকাশ্যে এসেছে।
তিনি সতর্ক করেন যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে এবং আরও ৩০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশে ১৫ লাখ তরুণ-তরুণী বেকার এবং স্নাতক পর্যায়ে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন কর্মহীন।
অধ্যাপক তিতুমীর বলেন, এই স্থবিরতা কাটিয়ে অভূতপূর্ব সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশকে এখন একটি নতুন অর্থনৈতিক মডেলের প্রয়োজন।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাবে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি পিছিয়ে আছে।
দেশে জাতীয় বিনিয়োগনীতি নেই, ফলে বিদেশি ও স্থানীয় বিনিয়োগের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য নেই। তিনি জাতীয় বাণিজ্য, রপ্তানি ও আমদানি নীতির সঙ্গে সংযুক্ত একটি পদ্ধতিগত বিনিয়োগ উন্নয়ন কৌশলের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যের উপসংহারে বলেন, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন না আনতে পারলে শত সংস্কার করেও সুফল মিলবে না। রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও সহনশীলতা ও পরস্পরের প্রতি সম্মান বজায় রাখার ওপর তিনি জোর দেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য মনজুর হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র নকিবুর রহমান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ, হিসাববিদ স্নেহাশীষ বড়ুয়া, কাউন্টারপার্টের নির্বাহী সম্পাদক জ্যোতি রহমান, এবং চালডালের সিইও ওয়াসিম আলিম।