শুক্রবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ:
শীর্ষস্থানীয় পোশাক ব্র্যান্ড স্ট্যানলি ও বিজিএমইএ এর মধ্যে বৈঠক, পোশাক শিল্পে টেকসই উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা জাতীয় নির্বাচন ও রমজানের কারণে এগিয়ে আনা হলো অমর একুশে বইমেলা ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় দশ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন, রাজনৈতিক কারণ বলছেন শংশ্লিস্টরা কৃষির হাত ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে-বাংলাদেশ : ব্যাকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর<gwmw style="display:none;"></gwmw><gwmw style="display:none;"></gwmw> ঢাকায় শুরু হলো ৪ দিনব্যাপী “সাউথ এশিয়া ট্রেড ফেয়ার” ইসলামী ব্যাংক পেলো ‘মোস্ট আউটস্ট্যান্ডিং ইসলামিক ব্যাংক ২০২৫’ পুরস্কার নগদ টাকার ব্যবহার কমাতে ক্যাশলেস লেনদেনের ওপর জোর, বছরে খরচ সাশ্রয় হবে ১.৬৫ লাখ কোটি টাকা কুঁড়ার তেল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল এনবিআর ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩৬৩ কোটি টাকা আত্মসাত: এস আলম ও নাবিল গ্রুপের মালিকসহ ৪৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

কৃষির হাত ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে-বাংলাদেশ : ব্যাকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর

ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, কৃষিঋণ শুধু কৃষকদের উৎপাদন বাড়ায় না, এটি গ্রামীণ উন্নয়ন ও ঋণগ্রহীতাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের অন্যতম কার্যকর সমাধান। বাংলাদেশ যতটুকু এগিয়েছে, কৃষির হাত ধরেই এগিয়েছে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের উন্নতি হতে পারে কৃষির মাধ্যমেই।

আজ (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি) ‘আয়োজিত কৃষি উদ্যোক্তা সমাবেশ ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। হোটেল লংবিচে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় তিনশত কৃষি উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেন। এটা ছিল ৬৪তম জেলার অনুষ্ঠান। এর আগে ৬৩ জেলায় একই ধরনের কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “কৃষি শুধু কৃষকের জীবিকা নয়, এটি পুরো জাতির খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির মেরুদণ্ড। তাই কৃষি উদ্যোক্তাদের সহায়তা ও সহজ শর্তে ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা চাই প্রকৃত কৃষকের হাতে কৃষিঋণ পৌঁছাক, ব্যাংকিং সেবা সহজ হোক এবং ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কৃষকরা আরও সুবিধা পান।”

ড. মনসুর সতর্ক করে দিয়ে বলেন, কৃষকদের পর্যাপ্ত সহায়তা না দিলে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা ও ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা জরুরি, যা গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।

তিনি ইউসিবির এ ধরনের উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

সকাল থেকেই অনুষ্ঠানস্থল ভরে উঠেছিল প্রাণচাঞ্চল্যে। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা উদ্যোক্তারা একে অপরের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন, নতুন পরিকল্পনার কথা জানান এবং বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে দিকনির্দেশনা গ্রহণ করেন। কৃষিকে কেন্দ্র করে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার আলোচনায় মুখর ছিল পুরো আয়োজন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান শরীফ জহীর বলেন, “আমরা দেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য কৃষির টেকসই উন্নয়ন ও কৃষি উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের বিশ্বাস, এই ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি কৃষি উদ্যোক্তাদের আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।”

সভাপতির বক্তব্যে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ বলেন, “আমরা শুধু ঋণ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছি না; আমরা চাই উদ্যোক্তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে আত্মনির্ভরশীল হোক, সফল হোক, এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখুক।”

দিনব্যাপী এ সমাবেশে কৃষি ও সংশ্লিষ্ট খাতের নানা দিক উঠে আসে। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী পরিচালক মো: মকবুল হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. বিমল কুমার প্রামানিক, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ এম খালেকুজ্জামান এবং জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা। স্বাগত বক্তব্য দেন ভরসার নতুন জানালা প্রকল্পের সমন্বয়ক ও বিটিভির মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক রেজাউল করিম সিদ্দিক।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউসিবির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাবিল মোস্তাফিজুর রহমান, আদনান মাসুদসহ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তারা জানান, সফল উদ্যোক্তা হতে হলে বাজার বিশ্লেষণ, ব্যবসা পরিকল্পনা, প্রযুক্তি ব্যবহারের কৌশল এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট জ্ঞান থাকা জরুরি। এ ছাড়া ব্যাংকের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করা এবং আর্থিক সহায়তার সুযোগগুলো কাজে লাগানোর বিষয়েও হাতে-কলমে নির্দেশনা পেয়েছেন তারা।

অংশগ্রহণকারীরা অনেকেই বললেন, এর আগে ইউসিবির সহায়তায় তারা আধুনিক বীজ, সার কিংবা কৃষি যন্ত্রপাতি পেয়েছেন। তবে সরাসরি প্রশিক্ষণ পেয়ে এবার তারা আরও আত্মবিশ্বাসী।

উল্লেখ্য, ইউসিবি এগ্রো সিএসআর প্রকল্প ‘ভরসার নতুন জানালা’-র মাধ্যমে সারা দেশের ৬৪ জেলায় প্রায় ১৪ হাজার কৃষককে ‘কৃষি উদ্যোক্তা দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ’ দিয়েছে। এ ছাড়া দেশের ৫০টি মডেল উপজেলার ৩ হাজার কৃষককে নিবিড় সহায়তা প্রদান করেছে। এর মধ্যে রয়েছে— কারিগরি প্রশিক্ষণ, গবাদি প্রাণীর জন্য ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প, জৈবসার ও উন্নত মানের বীজ বিতরণ, কৃষি যান্ত্রিকীকরণে প্রত্যক্ষ অনুদান, ৬৫ হাজার বৃক্ষ রোপণ, তামাকের পরিবর্তে গম ও ভূট্টা চাষে প্রণোদনা, মাছ চাষে অত্যাধুনিক ডিভাইস বিতরণ, বজ্রপাত নিরোধক ডিভাইস স্থাপন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য (সোলার ড্রায়ার, হাসকিং মিল,  ক্রিম সেপারেটর, আচার তৈরির উপকরণ) সহায়তা, পোস্ট হারভেস্ট ক্ষতি কমানোর জন্য স্টোরেজ সিস্টেম, ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপন, জৈব বালাইনাশক, লবণাক্ত এলাকার ফসল বিন্যাস, চর এলাকায় জলবায়ু-সহিষ্ণু প্রযুক্তি নিয়ে প্রয়োগিক গবেষণা (কৃষক ছাউনি, নেট হাউজে  চারা উৎপাদন, মাছ চাষ, হাঁস, মুরগি, ভেড়া পালন, জৈব সার উৎপাদন ইত্যাদি)। এসব কাজের মাধ্যমে কৃষকদের দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা, কারিগরি জ্ঞান এবং ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে অংশগ্রহণ বেড়েছে।